Friday, August 8, 2008
আল্পস্ পাহাড়ের শামোনি ভ্যালি :
শামোনি (Chamonix) ভ্যালি : এবার আমাদের গন্তব্য স্থল হল শামোনি ভ্যালি। ইটালি আর সুইজারল্যান্ডের বর্ডার ঘেঁষে ফ্রান্সের দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত এই উপত্যকা। এটি ফ্রেঞ্চ আল্পসের মঁ ব্লাঁ ( Mont. Blanc ) অঞ্চলের একটি বিশাল, সমৃদ্ধ ও বর্ধিষ্নু উপত্যকা। এই জায়গাটিকে তাই অনেক সময় শামোনি মঁ ব্লাঁ বলা হয়।
শামোনি যাবার জন্য প্রথমে আকাশ পথে উড়ে যেতে হল প্যারিস থেকে জেনেভা। ট্রেনে চেপেও যাওয়া যেত, কিন্তু প্যারিস থেকে ট্রেন জার্নি ভীষন ক্লান্তিকর আর সময় সাপেক্ষ শুনেছিলাম। তাই আমরা ফ্লাই করার সিদ্ধান্ত নিলাম। প্লেনে যদিও এক ঘন্টা সময় লাগার কথা, কিন্তু আগে পরের চেক ইন, চেক আউট সব মিলিয়ে আমাদের প্রায় ৪ ঘন্টা লেগে গেল জেনেভা পৌঁছাতে। জেনেভা পৌছালাম প্রায় সকাল ১০ টায়। এর পর সেখান থেকে বাসে করে ( এটা একটা শেয়ার্ড বাস, হোটেল থেকেই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল, প্রাইভেট ট্যাক্সি বা বাসও পাওয়া যায়, কিন্তু তাতে খরচা অনেক বেশি।) ১ ঘন্টা জার্নি করতে হল শামোনি পৌছতে। পুরো রাস্তাটাই সবুজ পাহাড়ে ঘেরা, আর সুন্দর সাজানো সব ঘর বাড়ি। মাঝে মাঝে খরস্রোতা নদীর জলের শব্দ শোনা যাচ্ছিল, আর তার দেখাও মিলছিল, যদিও সে নদীর জল তিস্তার মতো নীল আর স্বচ্ছ নয়, একটু ঘোলাটে। তবুও বার বার মনে হচ্ছিল আমার অতি চেনা শহর শিলিগুড়ি থেকে সেভক বা মিরিক জার্নির কথা। পাহাড়ি রাস্তা আমার ভীষন ভাল লাগে। তবে আমার মনে হল আমাদের পাহাড়ের রাস্তাগুলো অনেক বেশি সুন্দর আর ভয়ঙ্কর। এই জায়গাটা সুন্দর ঠিকই, কিন্তু ভয়টা ছিল না। রাস্তা অনেকটা চওড়া, আর দুই দিকের পাহাড়ে বড় বড় তারের জালি দিয়ে পাহাড়কে যেন বেধেঁ রাখা হয়েছে।
শামোনি পৌঁছতে পৌঁছতে আমাদের প্রায় ১১ টার বেশি হয়ে গেল। তারপর হোটেলে ঢুকতে ঢুকতে প্রায় ১২টা। সেদিন এত ক্লান্ত ছিলাম যে ট্যুরিষ্ট অফিস থেকে সমস্ত ইনফরমেশন সংগ্রহ করে শামোনি ভ্যালিতেই শুধু ঘুরে বেড়ালাম।
পরদিন দেরি না করে সকাল সকাল বেরিয়ে পরলাম আগুই দি মিদি(Aiguille Du Midi) র উদ্দেশ্যে। ফ্রেঞ্চ আল্পস্ এর বিশাল এক অঞ্চল হলো মঁ ব্লা। এই অঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু পর্বত শৃঙ্গের নাম ও মঁ ব্লা (উচ্চতা ৪৮১০ মি)। অপেক্ষাকৃত ছোট একটা পর্বত শৃঙ্গ হল আগুই দি মিদি (উচ্চতা ৩৮৪২ মি)। প্রসঙ্গতঃ, আমাদের পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ সান্দাক্ফুর উচ্চতা ৩৬৩৬ মি। মজাটা হল যে কোনো রকম ট্রেকিং না করেই পৌছনো যায় আগুই দি মিদি পর্বত শৃঙ্গের চূড়ায়। কেবল কারে করে। এই পর্বত শৃঙ্গ সম্পর্কে বলার আগে আমার মনে হয় এই কেবল কার সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। এই কেবল কার টি তৈরি হয়েছিল ১৯৫৫ সালে। পৃথিবীর অন্যান্য কেবল কারের চেয়ে, এই কেবল কারটিই পাহাড়ে ওঠবার জন্যে ভার্টিকালি সর্বোচ্চ উচ্চতা অতিক্রম করে।
শামোনি ভ্যালি থেকে শুরু করে প্রথম দফায় কেবল কার টি নিয়ে যাবে প্ল্যান দু আগুই দি মিদিতে। এটা একটা সমতল জায়গা (উচ্চতা ২৩১৭ মি)। সবুজ পাহাড় এখানেই শেষ, এরপর উপরে শুধু বরফে ঢাকা কালো পাথরের পাহাড়। এখান থেকে এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ মঁ ব্লা ট্রেকিং করে ওঠা যায়। মঁ ব্লা’য় ওঠার জন্যে কেবল কারের ব্যবস্থা নেই। এখান থেকে আগুই দি মিদি তে অন্য আর একটি কেবল কার এসে নিয়ে যাবে। শামোনি ভ্যালি থেকে আগুই দি মিদি (৩৮৪২ মি.) উঠতে সময় লাগল মাত্র ২০ মিনিট। আমি অবশ্য শুধু কেবল কারে যাওয়ার সময়ের কথা বলছি। মাঝে আধ ঘন্টা দ্বিতীয় কেবল কারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এই কেবল কার ভ্রমনটা ছিল ভীষন রোমাঞ্চকর, কিন্তু ভয়ঙ্কর নয় মোটেই।
আগুই দি মিদি পর্বত শৃঙ্গে উঠে দেখি কি নেই এখানে। দর্শকদের সমস্ত রকম সুবিধার কথা মাথায় রেখে এত ওপরেও বানানো হয়েছে খাবারের দোকান, শপিং, টয়লেট, আর সুন্দর প্ল্যাটফর্ম বানিয়ে রাখা হয়েছে চারিপাশের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্যে। একদম চূড়ায় পৌছানোর জন্য আছে লিফ্ট্ এর ব্যবস্থাও। এই লিফ্টটা একেবারে পাহাড়ের ভেতরেই বানানো হয়েছে। অবাক হয়ে যাই এদের টেকনোলজিকাল দক্ষতা দেখে। কিভাবে একটা পর্বত শৃঙ্গ কে সাধারন মানুষের কাছে এত সহজে পৌছে দেওয়া যায়, সেই প্রচেষ্টা দেখে। লিফ্ট এ করে চূড়ায় পৌছে দেখা গেল আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে কি অসাধারন স্বর্গীয় দৃশ্য ! এখান থেকে মঁ ব্লা পর্বত চূড়া পরিস্কার দেখা যায়। আগুই দি মিদি থেকে আর একটি কেবল কারে চড়ে Glacier de Geant অতিক্রম করে ইটালি সীমানাও যাওয়া যায়। এই কেবল কার টি শুধু গরম কালেই চলাচল করে। কিন্তু আমরা সময়ের অভাবে যেতে পারিনি ইটালি সীমানায়। আগুই দি মিদি কে সরাসরি ইংরেজিতে অনুবাদ করলে ‘Needle of midday’ বলা যেতে পারে। দুপুর বেলায় শামোনি থেকে সূর্য্য কে ঠিক এই পাহাড়ের চূড়ায় বসে থাকতে দেখা যায়, তাই এই নাম। যখন কেবল কারে চড়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম তখন ভেবেছিলাম, তাড়াতাড়ি নেমে এসে একটা গ্লেসিয়ার দেখতে যাব। কিন্তু ওপরে যে এত বিশাল বরফ ঢাকা পাহাড়ের সমুদ্র অপেক্ষা করে ছিল আমাদের জন্যে, তার বিন্দুমাত্র ধারনা ছিল না। চারিদিকে বরফ ঢাকা পাহাড়। অনেক নিচে শামোনি ভ্যালি দেখা যাচ্ছে। মাঝে মঝেই মেঘের কোলে ঢুকে পরছিলাম, আবার ঝিরঝির তুষারপাতও চলছিল সমান তালে। আমরা সবাই গরম কাপড় সঙ্গে নিয়ে এসেছিলাম। তাই ভালই উপভোগ করতে পেরেছি মেঘ আর ঝিরঝির তুষারপাতের লুকোচুরির খেলা। কখনও মেঘ ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাদের, আবার কখনও বরফ বৃষ্টিতে মাথা ভিজিয়ে দিচ্ছে। চারিদিকের আলাদা আলাদা সৌন্দর্য। একদিকে গোটা পাহাড় বরফে ঢাকা। অনেকে সেখানে ট্রেকিং করছে, আর এক দিকে অনেক নীচে বয়ে চলেছে, পাহাড়ি নদী সবুজে ঘেরা পাহাড়ের ভেতর দিয়ে। সব মিলিয়ে অপূর্ব এক সুন্দর মন মাতানো অনুভূতি নিয়ে ফিরে এলাম। তখন আর অন্য কোনো জায়গা যাওয়ার সময় নেই। শামোনি ভ্যালি তেই সময় কাটিয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। পরদিন যাব গ্লেসিয়ার দেখতে।
নীচে শামোনি শহর আর আগুই দু মিদি পাহাড়ের কিছু ছবির স্লাইড শো দিলাম :
*****************************************************************
আজ সকাল থেকেই ভীষণ উত্তেজিত আমি, কারণ আজ দেখব গ্লেসিয়ার (হিমবাহ) দেখতে । যা এতদিন শুধু বই’তেই পরে এসেছি। মঁ ব্লাঁ অঞ্চলে অনেক গুলো গ্লেসিয়ার রয়েছে। যেমন Mer de Glace, Glacier d’Argentiere, Glacier des Bossons. এর মধ্যে আমরা সেদিন শুধু Mer de Glace (Sea of Ice) দেখতে পেরেছি। সকালে সেদিনও হোটেল থেকে প্রাতঃরাশ করেই বেরিয়ে পরেছিলাম। প্রথমে ট্রেন এ করে উঠতে হল পাহাড়ের ওপরে। এই জার্নি’টাও ভীষণ সুন্দর ছিলো, পাহাড়ের গা ঘেঁষে সবুজ বনানীর ভিতরে ছিলো রেললাইন। দুটো মাত্র কোচ নিয়ে এই ট্রয় ট্রেন চলছিলো একেবেঁকে। যাই হোক ট্রয় ট্রেনে করে ২০ মিনিট এর মধ্যে পৌঁছে গেলাম Mer de Glace glacier এর ফুটে। ওপর থেকে দেখে তো কিছুই বোঝার উপায় নেই, শুধু কালো পাথরের চাঁই ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছিল না। এখানে আবার ছোট কেবল কার এ চেপে নেমে যেতে হবে অনেকটা। এই ছোট কেবল কার গুলোকে এরা গন্ডোলা বলে। ১০ জনের বেশী একসাথে যাওয়া যায় না মনে হয়। যাইহোক নীচে তো নেমে এলাম, আর নামার পরে জানা গেল যে গ্লেসিয়ার’ কে সামনে থেকে দেখতে হলে এবার হেঁটে নামতে হবে ৩০০ টা সিঁড়ি। মানে আবার উঠতে হবেও অতটাই। ভেবে একটু ভয় পেলেও, নেমে পড়লাম জয় মা বলে। এখান থেকেই একটু আবহাওয়া বদলে গেল। বেশ বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। তাড়াতাড়ি নেমে এলাম গ্লেসিয়ারের সামনে, আর মনে হল, না এলে কি ভীষণ মিস্ করতাম। দূর থেকে যাকে কালো পাথর বলে মনে হচ্ছিল, সামনে থেকে দেখা গেল সেটা একটা নীল বরফের চাঙ্ক। এই হিমবাহটি লম্বায় ৭ কিমি আর এর গভীরতা হল ২০০ মিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪০০ মিটার ওপরে হল হিমবাহটির উৎসস্থল। ঘন্টায় ১ সেমি গতিতে বয়ে চলেছে এই গ্লেসিয়ার, সেটা খালি চোখে দেখা অসম্ভব। এটাই হল ফ্রান্সের সব থেকে বড়ো গ্লেসিয়ার। পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য এই গ্লেসিয়ার’টির ভেতরে ছোট্ট ছোট্ট গুহা বানিয়ে নানারকম বরফের স্ট্যাচু তৈরী করে তাতে লাইটিং-এর এফেক্ট দেওয়া হয়েছে। বরফের গুহার ভিতরে ঘুরে বেড়ানোর আরেকটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়ে যখন বেড়িয়ে এলাম তখন বৃষ্টি তো থেমেছে, কিন্তু শুরু হয়েছিলো ঝোড়ো হাওয়া। ওর মধ্যেই ধীরে ধীরে ফটো নিতে নিতে উঠে এলাম ঐ ৩০০ সিঁড়ি। এখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো, একটা ব্যাড নিউজ, জানা গেল যে ভীষণ ঝোড়ো হাওয়া বইছে, তাই এই সময় কেবল কার চলবে না, কখন ঠিক হবে তা কিছু বলা যায় না। অগত্যা কি আর করা? ৩০০ স্টেপ তো বেশ সুন্দর ছিলো, কিন্তু এবার যেটা করতে হলো, সেটা বলতে গেলে ভয়ানক, কারণ আমাদের হেঁটে উঠতে হলো ওই ৩০০ স্টেপ-এর দশগুন উচ্চতায়, আর সেই স্টেপ গুলো সব পাথরের, এবড়ো-খেবড়ো জায়গা, সরু গলি, নীচে খাদ। কিন্তু কিছুতো আর করার নেই, আমাদের উঠতেই হবে। একদম ছোটো বাচ্চাদের বাবারা কাঁধে তুলে নিলেও, বুড়ো দের জন্যে খুব খারাপ লাগছিল। ওই রাস্তায় ১ ঘন্টারও বেশী সময় লেগে গেল উঠতে, যেটা ৫ মিনিট এরও কম সময়ে নেমেছিলাম কেবল কারে চেপে। ওপরে এসে কিছু ছবি নিয়ে আবার ট্রয় ট্রেন এ চেপে সোজা হোটেল। পথ চলার শক্তি আর ছিলো না। আবহাওয়া তখনও খুব একটা ভালো হল না দেখে, আমরা আর অন্য গ্লেসিয়ার দেখতে যাওয়ার সাহস করে উঠতে পারিনি। আর তাছাড়া ট্যুরিষ্ট অফিস থেকে জানাল যে তখন আর গিয়ে কোনো লাভ নেই, কারণ ওই গ্লেসিয়ার’গুলো বেশ দূরে, যেতেই সময় লেগে যাবে ২ ঘন্টা। সুতরাং, ডিনার সেরে রাত্রের শামোনিকে উপভোগ করে ফিরে এলাম হোটেল রুমে।
নীচে গ্লেসিয়ারের ভিতরের আর বাইরের কিছু ছবির স্লাইড শো দিলাম :
শামোনি ঘুরতে গিয়ে যদি শুধু পাহাড় আর গ্লেসিয়ার দেখেই ফিরে আসতে হয়, তাহলে তিন দিন ভালই, অবশ্য ভাগ্য সহায় থাকলে। কারণ পাহাড়ে যখন তখন আবহাওয়া বদলে যায়, আর ঐ রকম ঝোড়ো হাওয়া চলতে থাকলে সমস্ত কেবল কার গুলো বন্ধ হয়ে যায়। তখন অনেকেই বাধ্য হয় থেকে যেতে।
কিন্তু যারা অনেক বেশী উদ্যমী ও সাহসী তাদের জন্য বলব ৭ দিনও যথেষ্ট নয়। আমরা কেবল একটা পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছি, আর একটি মাত্র গ্লেসিয়ার দেখেছি। কিন্তু শামোনি তে এইরকম অনেক চূড়া আছে যাতে ট্রেকিং করে ওঠা যায়। আর গ্লেসিয়ারের কথা তো আগেই বলেছি, অনেক গুলো গ্লেসিয়ার আছে। এছাড়াও আছে অনেকরকম অ্যাকটিভিটি, ট্রেকিং, স্কী রান, প্যারাগ্লাইডিং, আরো অনেক কিছু। কেবল কার-এ চড়ে পাহাড়ে উঠে, সেখান থেকে প্যারাস্যুটে জাম্পিং করার ব্যবস্থা আছে, যেটাকে প্যারাগ্লাইডিং বলে। বৃষ্টির সময় ইনডোর মাউন্টেনিং করার ব্যবস্থা আছে, তাছাড়া নানাভাবে পাহাড়ে ট্রেকিং করার উপায় বার করেছে এরা। আছে নানারকম স্কুল যেখানে স্কী করা বা এই সব জাম্পিং আর ক্লাইম্বিং শেখানো হয়। সব দেখে এনজয় করার জন্য কম করেও ৭দিন তো অবশ্যই দরকার।
এখানেই শেষ হল আমাদের শামোনি ভ্রমণ। আর শুরু হল আর এক নতুন জায়গা দেখার আগ্রহ। এখান থেকেই পরদিন সকালে যাব প্রথমে নিস্, ফ্রান্সের দক্ষিণে অবস্থিত মেডিটারিয়ান সমুদ্রের ধারে একটি বিখ্যাত ও ধনী শহর। তারপর সেখান থেকে যাব কান, মোনাকো, এবং মন্টি কার্লো (ফ্রেঞ্চ রিভেইরা)....ইত্যাদি ইত্যাদি। এর মধ্যে মোনাকো একটা ছোটো দেশ। অত্যাধিক রকমের ধনী শহর, চারিদিকে ক্যাসিনো দিয়ে ভরা। কিন্তু প্রবেশ করার ক্ষমতা সবার নেই। কিন্তু সে গল্প আজ নয়, পরে কোন এক দিন শোনাব। আজ এখানেই ইতি।
সুপর্না মিত্র
৮ই অগাস্ট, ২০০৮
প্যারিস, ফ্রান্স।
Thursday, July 31, 2008
হারায়ে খুঁজি :
আজ সকাল থেকেই মুডটা অফ দিয়ার। একে তো গা প্যাচপ্যাচে গরম তার ওপরে লোডশেডিং! যাও বা অনেক পরে পাওয়ার এলো, কিন্তু অর্কুট খুলতেই মেজাজ টা আরও গরম হয়ে গেল। সুমন্তর আজও কোনও স্ক্র্যাপ নেই। মন খারাপ করা মেজাজ নিয়েই স্কুলে বেরিয়ে গিয়েছিল তখন। ভেবেছিল বাড়ি ফিরে একটা মেল করবে সুমন্তকে। গতকাল অনেক রাত পর্যন্ত জেগেছিল ওর স্ক্র্যাপের আশায়। কিন্তু ও কোনও স্ক্র্যাপ করেনি, অথচ মাঝেমাঝেই ওকে অনলাইন দেখা যাচ্ছে। আজ প্রায় ন’মাস হয়ে গেল ওর সাথে আলাপ হয়েছে অর্কুটে। কোনদিন এমন হয়নি। প্রথম থেকেই কেমন যেন একটা বাঁধনে পরে গিয়েছিল দিয়া। চুম্বকের মত টেনেছে ওকে সুমন্ত। কাজ ফেলে ছুটে আসত ওর ডাকে। রাত জেগে জেগে চ্যাট করেছে ইয়াহু মেসেঞ্জারে প্রায় দিন। কিন্তু আজ প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল, ওর কোনও সাড়া নেই। কিছু আর ভাল লাগছিল না, ল্যাপটপ বন্ধ করে দিয়ে ও তাই শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল। কি এমন হল? কেন কথা বলছে না ও? দেখা করতে রাজি হয়নি তাই? কিন্তু কি করে রাজি হবে কিছুতেই বুঝতে পারছিল না। ওর মনে যে ভীষন ভয়। ওর সিক্সথ্ সেন্স ওকে বলেছিল দেখা করলে ও নিজেকে আটকাতে পারবে না। এই বয়সে নতুন করে আর কোন সম্পর্কে বাঁধা পরতে চায় না দিয়া। ওর মনকে ও কঠিন শাসনে বেঁধে রেখেছে।
দিয়ার বয়স এখন ৩৬। সুমন্তরও তাই। ওর বৌ আছে। আছে একটি পাঁচ বছরের ছেলে, সোহম। দিয়া এই সব ভেবেই মনকে বাঁধে, জোর করে। অনেক বার ভেবেছে গল্প করবে না ওর সাথে। ইয়াহু মেসেঞ্জারে ডাকলেও সাড়া দেবে না। কিন্তু পারে নি। মনের ঝাঁপি খুলে দিয়েছে সুমন্তর সামনে, এমনকি রজতের কথাও ওকে বলে বসে আছে। আর বলবে নাই বা কেন, রজতের ধ্যান ধারনা, চিন্তা ভাবনা, কথা বলার ভঙ্গি সবই যে সুমন্তর সাথে ভীষন ভাবে মিলে যায়। দিয়ার মনে হয় ও যেন রজতের সাথেই কথা বলছে। আজ প্রায় ১৩ বছর পরে ও যেন আবার রজতকেই খুঁজে পেয়েছিল সুমন্তর মধ্যে। প্রান খুলে গল্প করে, যেমন আগে করত রজতের সাথে, ঘন্টার পর ঘন্টা। ভীষন ফেমাস ছিল ওরা ইউনিভার্সিটিতে, তর্কবিদ হিসেবে। যে কোনো বিষয় পেলেই হল, তর্ক করতে বসে যেত দুজনে। আর রজত যেন ইচ্ছে করেই ওর বিরূদ্ধে যুক্তি শানাতো। সুমন্তও একই ভাবে তর্ক করে ওর সাথে। অবশ্য যখন বুঝতে পারে যে ওকে রজত ভেবে উচ্ছস্বিত দিয়া, তখন ভীষন রেগে যায়। একটুও শুনতে চায় না রজতের গল্প, ওদের ইউনিভার্সিটির গল্প, প্রেমের গল্প। কিন্তু সেদিন মন দিয়ে শুনেছিল, যেদিন দিয়া ওকে রজতের সেই চিঠির গল্প শুনিয়েছিল।
ইউনিভার্সিটি থেকে দু বছর মাষ্টার ডিগ্রি কমপ্লিট করে বাড়ি ফিরেছিল ভীষন খুশিতে। ভেবেছিল বাড়িতে মা বাবা কে জানিয়ে দেবে রজতের কথা। রজত খুবই ভালো ছাত্র, ভবিষ্যত উজ্বল, বাড়িতে সেভাবে আপত্তি করার কোনো কারন ছিল না। কিন্তু বাড়ি ফেরার দু দিনের মাথায় পেল রজতের চিঠি। “পারিবারিক সমস্যার কারনে কিছুতেই তোকে বিয়ে করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাকে ভুলে যাস, আমাকে চিঠি লিখিস না, কারন আমি উত্তর দেব না। ভালো থাকিস।” এই ছিল রজতের সংক্ষিপ্ত চিঠি, যা ওকে আঘাত করেছিল যত, তার থেকেও বেশি অপমানিত করেছিল। লজ্জায়, অপমানে, দুঃখে দু'চোখের পাতা এক করতে পারেনি বেশ কিছুদিন। আর চেষ্টাও করেনি রজতের খবর নেওয়ার। প্রানপন চেষ্টা করেছিল রজতকে ভুলে যাবার। আস্তে আস্তে সব বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল, যারা ওদের দুজনেরই বন্ধু ছিল। ৬ মাসের মাথায় অংকের টিচার হয়ে চলে এসেছিল এই শহর, জলপাইগুড়িতে। তারপর থেকে কেটে গেল এতগুলো বছর ছাত্রী পড়িয়ে। গত বছর ওর ছোটো ভাই সফ্টওয়ার ইঞ্জিনীয়র হিসেবে সদ্য চাকরি পাওয়ার পরে এই ল্যাপটপ টা গিফ্ট করেছিল, আর তখন থেকেই একটু একটু করে বদলাতে থাকে দিয়ার জগত। ভাই ই প্রথম অর্কুটে একটা অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে যায় তিথি নাম দিয়ে। ভাইয়ের বৌ সঙ্গীতার সাথে অর্কুটেই কথা হয় এখন। তারপর আস্তে আস্তে সঙ্গীতার বন্ধুরা সব ওর বন্ধু হতে থাকলো। আর এই ভাবেই ও পেয়ে গেল একদিন সুমন্তকে। সুমন্ত থাকে আমেরিকায়, মেরীল্যান্ডে। সেখানে ও প্রায় এক দশক ধরে আছে। একটি ছেলে আর বৌ নিয়ে সুখের সংসার। অ্যালবামে ওর বৌএর ছবি দেখেছে দিয়া। খুব সুন্দরী দেখতে। মনে মনে কখনও একটু ঈর্ষাও বোধকরে আজকাল দিয়া। কিন্তু দিয়াকে সুমন্ত কখনও সেভাবে বৌ এর গল্প শোনায়নি।
সেদিন রজতের চিঠির গল্প শুনে অনেকক্ষণ কোনো কথা বলেনি সুমন্ত। বোঝাতে চেয়েছিলো দিয়া কে। যে হতে পারে, সত্যি কোনো বিশেষ কারন ছিলো, বিয়ে না করতে চাওয়ার। এতে নিজেকে অপমানিত ভাবছো কেনো?? কিন্তু দিয়া আর এই নিয়ে কথা এগোতে চায় নি। বলেছিলো, রজতের কথা আর ভাবতে চাই না। সেটা শুনেও মনে হয় একটু দুঃখ পেযেছিলো সুমন্ত। সেদিন ওই যেন রজতের হয়ে দিয়ার সাথে তর্কে বসেছিল। বলেছিল, “ তিথি, তুমি ভুল করছ কোথাও।” বলেছিল, “রাগ, দুঃখ, অভিমান ঠিক আছে। কিন্তু অপমানিত বোধ কোরো না। তাতে তুমি তোমার ভালোবাসাকেই অপমান করবে।” আরো অনেক কিছু বলেছিল সেদিন ও। আর ঠিক সেই সময়ই সুমন্তর মাথায় দেখা করার ভুতটা চেপে যায়। সে কোনো কাজে ইন্ডিয়া আসছে নেক্সট মাসে, জলপাইগুড়িতে এসে দেখা করতে চায়। কিন্তু তাতে প্রবল ভাবে আপত্তি জানায় দিয়া। কিছুতেই দেখা করতে রাজি হয়নি। সেদিন ই শেষ কথা। তারপর আর না স্ক্র্যাপ, না ওয়াই/এম এ চ্যাট, কোথাও দেখা পায়নি সুমন্তর।
হঠাত ই মোবাইলে টা বেজে উঠলো। এখন রাত ১২ টা বাজে। এতো রাতে ফোন এলে ভীষণ টেনশন হয়। নাম্বার দেখে মনে হছে শিলিগুড়ি থেকে কেউ করেছে।
হ্যালো বলার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে ভারী গলায় প্রশ্ন
----তিথি?
দিয়া মাঝে মাঝে ভুলে যায় যে ও ই তিথি নাম নিয়ে অর্কুটে বসে আছে। না বলতে গিয়েও থেমে যায়।
---হ্যাঁ বলছি।
এতো রাতে অপরিচিত গলা শুনে একটু বিরক্তি নিয়েই বলে,
----কে বলছেন ??
ওপার থেকে ভেসে এল জোরে হাসির আওয়াজ।
----কেমন চমকে দিলাম তো?? আমি সুমন্ত বলছি।
----তুমি?? আমার ফোন নাম্বার পেলে কোথা থেকে??
প্রায় চিত্কার করে ওঠে দিয়া।
----ভুলে যেও না, তোমার ভাই এর বৌ, আমার অর্কুট ফ্রেন্ড। ওর কাছ থেকে অনেক কায়দা করে পেতে হয়েছে, মাড্যাম্!
এদিকে দিয়া তখনও ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
----এ তোমার ভারি অন্যায় সুমন্ত, এতো দিন কোনো খবর নেই, আমি কত রকম চিন্তা করছি, আর এভাবে রাত দুপুরে তুমি আমার সাথে রসিকতা করছো?? মিথ্যে কথা বলছ কেনো??
---মিথ্যে নয় মাড্যাম, আমি এই মুহুর্তে শিলিগুড়ি বাস টার্মিনাস এ বসে আছি। এখানেই একটা হোটেলে উঠেছি, কাল সকালে অনুগ্রহ করে যদি এই অধম কে দর্শন দেন তো অধমের জীবন সার্থক হয়!”
আবার পর মুহুর্তেই স্বর পাল্টে যায় ওর।
----না বোলো না প্লীজ। আমি সাত সমুদ্র পার করে এসেছি শুধু তোমার জন্যে। তিথি, আমি তোমাকে একবার টি দেখতে চাই, প্লীজ!
এবার দিয়া বেশ ঘাবড়ে যায়। কি করবে এখন?? মনের দোলাচল কে বাড়তে দেবে, নাকি তাকে শাসন করবে?
----কি হল?? সাড়া নেই কেন??..
----কি হচ্ছে, এসব?? কেন মিথ্যে বলছ?? এই বুড়ো বয়সে এ সব মানায় নাকি? তুমি এরকম ছেলে মানুষের মতো আচরন করবে, এ আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।
----প্রেমের কোন বয়স নেই, তিথি।
----প্রেমের কথা কে বলেছে ??
----ওহো, বলনি বুঝি?? তাহলে প্লীজ, বলে ফেলো তাড়াতাড়ি। সময় নষ্ট করো না। আর শোনো, কাল একটা ব্ল্যাক শাড়ি পড়ে এসো।
ও যেন ধরেই নিয়েছে দিয়া যাচ্ছে ওর সাথে দেখা করতে। দিয়াও কি তাই ভাবছে না?? সুমন্তের রসিকতার হাত থেকে বাচাঁর জন্যে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেল শিলিগুড়ি গিয়ে ওর সাথে দেখা করতে। তাড়াতাড়ি ফোন রেখে দিলো ও। না হলে ওদিক থেকে রসিকতার মাত্রা বেড়েই চলত। সুমন্ত বলেছে ওরা সপরিবারে এসেছে, কাল তিথির সাথে দেখা করেই বেরিয়ে যাবে দার্জিলিং। দেখা করতে হলে, কাল-ই করতে হবে।
*************************************************************
।২।
ভীষন এক উত্তেজনায় সারা রাত ঘুমোতে পারে নি দিয়া। কোনো রকমে সকালে উঠেই সেজে গুজে বেরিযে পরল বাস স্ট্যান্ড এর দিকে। দিয়া আজ একটু সেজেও নিয়েছে। দেখতে খুব ভালো না হলেও ওকে বেশ আকর্ষণীয় লাগে সবার, এটা ও নিজেও বেশ ভালোই বুঝতে পারে। লম্বা, ছিপছিপে ফিগারে, শিফন শাড়ি তে ওকে বেশ মানায়, আজ তাই একটা ব্ল্যাক আর ব্লু কম্বিনেশনের শিফন পরেছে। লম্বা চুলটা ছেড়েই রেখেছে। এক ঘন্টার জার্নি করতে হবে ওকে। সুমন্তর বৌ সাথে রয়েছে বলে একটু যে অস্বস্তি হচ্ছে না তা নয়, কিন্তু তবুও একটা কিছুর আকর্ষন ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আর কিছুক্ষন পরেই দেখা হবে সুমন্তর সাথে।
বাস কন্ডাক্টরের চিৎকারে ওর চমক ভাঙ্গল। বুঝতে পারল গন্তব্য স্থানে পৌছে গেছে ও। কিন্তু যে আগ্রহ নিয়ে এসেছিল, এখন যেন কেমন একটা ভয় ভয় ভাব জাগতে শুরু করেছে মনের ভেতরে। বুকের ভেতরে যেন কেউ হাজার টা ড্রাম পিটিয়ে চলেছে। চলার গতি রুদ্ধ করেছে যেন কেউ, পা সরছে না। কোনো রকমে বাস থেকে নেমে ভেতরে ঢুকে খুঁজতে থাকল সুমন্ত কে এদিক ওদিক। ওকেই খুঁজে বার করতে হবে, কারন সুমন্ত কখনো ওকে দেখেনি। অ্যালবামে নিজের ফোটো দিতে ভরসা পায় না দিয়া, সুমন্ত অনেক বার চেয়েছিল, ও দেয় নি। কিন্তু কোথায় সুমন্ত? দেখতে পাচ্ছে না তেমন কাউকে। কি মনে হতে টার্মিনাস এর ভেতরে একটা রেঁস্তোরা আছে, সেই জায়গাটার কথা মনে পরে গেল। রজতের সাথে ইউনিভার্সিটি তে পড়াকালীন অনেক বার এসেছে এই রেঁস্তোরাতে। সেখানেই গেল দেখতে, আছে কি না। কিন্তু সেখানেও নেই দেখে বেরিয়ে আসতেই শুনল ওর নাম ধরে কেউ ডাকছে।
-----দিয়া
কিন্তু এ তো সুমন্তর গলা নয়! পেছনে তাকিয়েই ওর মাথা ঘুরে গেলো, এ কাকে দেখছে ও? ওর সামনে দাঁড়িয়ে রজত। একই রকম চেহারা, একই রকম হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে দু’হাত প্রসারিত করে। কাল বিকেলেই দেখা হয়েছিল, আবার আজ দেখা হল, এই রকম-ই একটা ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে সে। দিয়ার সমস্ত শক্তি যেন লোপ পেতে বসেছে, শরীর অবশ হতে শুরু করেছে। ওকে জোর করে বসিয়ে দিলো রজত একটা কেবিনে। ঢুকেই পর্দা টেনে দিয়ে, কিছু বোঝার আগেই এক ঝটকায় ওকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে নিলো নিজের বুকের ওপরে। দিয়া সামলাতে পারছে না নিজেকে। ভাঙ্গতে শুরু করেছে, কিন্তু জোর করে আটকে রেখেছে নিজেকে।
----কি হচ্ছে রজত?? ছেড়ে দাও। আমি একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি, আমাকে যেতে হবে।
বলছে ঠিকই, কিন্তু ওর উঠে যাবার ক্ষমতা আর নেই। আর রজত তখন হাসতে শুরু করেছে।
----কার সাথে দেখা করতে এসেছো?? সুমন্ত??
দিয়া আর চমকায় না। ও এতক্ষনে বুঝতে পেরেছে সব। এতো দিন ধরে সুমন্ত কে রজত ভেবে ও কিছু ভুল করে নি। কিন্তু তবুও ও ধরা দিতে চায় না।
----তোমার বৌ আছে, রজত। তাকে অপমান করো না। একবার যা ভুল করেছো, আবার তার পুনরাবৃত্তি ঠিক নয়।
রজত তবুও ছাড়ে না, ওই ভাবেই জড়িয়ে ধরে থাকে দিয়া কে। কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলে,
----বৌ টা তো ফেক রে বোকা মেয়ে! নেট থেকে ফোটো চুরি করা কোনো এক সুন্দরী মেয়ের। বিয়েটা আর করা হয়ে ওঠেনি আমার ও।
-----মানে??
-----“মানে তো খুব সহজ, তুই যেমন দিয়া থেকে তিথি হয়েছিস, আমিও তেমনি রজত থেকে সুমন্ত হয়েছি। তুই নাম ছাড়া আর কিছু বদলাতে পারিস নি। আমি সব বদলে দিয়েছিলাম, যেদিন প্রথম তোর ফোটো সঙ্গীতার অ্যালবামে এ দেখেছিলাম। ওর অ্যালবামে এ প্রথমে তোর ভাই কে দেখি। তখনই সিওর ছিলাম যে এ তোরই ভাই। পরে সঙ্গীতা কে অনেক খুঁচিয়ে তোর একটা ফোটো দেখি ওর অ্যালবামে। একই রকম আছিস তুই, একটুও বদলাস নি। আর সেদিন থেকেই শুরু করি এই প্ল্যান। তোকে ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠিয়েছিলাম তিন চারটে ফেক প্রোফাইল বানিয়ে। এবার আর তোকে হারাতে চাই নি রে।”
একের পর এক অনেক কথা বলে চলেছে রজত। সব কথা কি কানে ঢুকছে দিয়ার?? দিয়া ভাঙ্গতে শুরু করেছিলো অনেক আগেই। ১৩ বছরের জমে থাকা সব অভিমান, অপমান, রাগ, দুঃখ, এক নিমেষে বাষ্প হয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে। ঘুমিয়ে থাকা সব ইন্দ্রিয় গুলো যেন সোনার কাঠির ছোঁয়ায় জেগে উঠছে একে একে। সেই একই রকম সাহস, একই রকম আবেগ, একই রকম জোর করে ভালোবাসা ছিনিয়ে নেবার ষ্টাইল, আর পারে না দিয়া, ভেঙ্গে পরে, খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে ধরা দেয়, নিজের খুশিতে। নিজেকে সমর্পন করে রজতের কাছে।
আর রজত? দিয়ার সমর্পনে সে যেন তার গোটা পৃথিবী কে পেয়ে যায় হাতের মুঠোয়। আরো শক্ত হয় তার হাতের বাঁধন।
দিয়ার মনে পরে যায়, ওর এক অর্কুট বন্ধু সুপর্নার লেখা একটা কবিতার শেষ কয়েকটি লাইন..
অনেক আশায় বুক বেধেঁছি যখন,
দূরে কোথাও সরিয়ে রেখে তোমায়,
ঠিক তখন-ই এলে হে প্রিয় সখা,
তোমার স্পর্শে ভেজাবে বলে আমায়!
আমি তখন সাত রঙা এক পাখি,
উড়ছি এক অজানা সুখের দেশে!
মনের সকল দ্বিধা দ্বন্দ ঝেড়ে,
আজ আমি যে ভিজবো নিঃশেষে!
আমি তখন ভাসছি যেন হাওয়ায়,
সুখ সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে মন!
ভাঙতে ভাঙতে কোন সে আলোর পথে,
এ যে আমার নিঃশর্ত সমর্পন!
প্যারিস, ফ্রান্স।
৩১ শে জুলাই, ২০০৮
Thursday, July 24, 2008
প্রসঙ্গ : পরমানু চুক্তি
প্যারিসের মাটিতে বসে আজ যখন পরমানু চুক্তি নিয়ে লিখতে বসেছি তখন দিল্লীর রাজনীতি ভীষণ ভাবে উত্তাল। কিন্তু রাজনীতি আমার আলোচনার বিষয় বস্তু নয়। আমার আলোচনার বিষয় বস্তু হল 'ইন্দো আমেরিকা ১২৩ চুক্তি'। আমি আজ শুধু এই পরমানু চুক্তি নিয়েই আলোচনা করব। এই চুক্তি নিয়ে সাধারন মানুষের মধ্যেও ধন্ধের শেষ নেই। খুব স্বাভাবিক ভাবেই। কারন এই চুক্তি বোঝার জন্যে যে টেকনিকাল জ্ঞান থাকা দরকার আমাদের মত সাধারন মানুষের তা নেই। কিন্তু যে চুক্তি নিয়ে সরকারের এই টালমাটাল অবস্থা সেই চুক্তি সম্পর্কে পুরোপুরি না হলেও কিছুটা ধারনা থাকা ভারতবর্ষের নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পরে। আজ হাতের সামনে ইন্টারনেট এসে যাওয়ায় তথ্য পাওয়ার সুযোগও আছে প্রচুর। তাই এই লেখার মূল বিষয় পরমানু চুক্তিটিকে আর একটু বোঝার চেষ্টা করা। আমাদের নন্ টেকনিকাল জ্ঞানকে পাথেয় করেই।
বর্তমান এই চুক্তিটিকে বুঝতে হলে আমাদের জানতে হবে এর ইতিহাস। কিভাবে এবং কোন পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হয়েছে একের পর এক চুক্তি ও সংস্থা। আমি সেই চুক্তি গুলোকে নিয়েই লেখার চেষ্টা করব।
পরমানু গবেষনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হল পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা। পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা করা হয় মূলতঃ পরমানু অস্ত্রের ক্ষমতা যাচাই করার জন্যে। প্রথম পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা করা হয়েছিল ১৯৪৫ সালের ১৬ই জুলাই। বলাই বাহুল্য প্রথম পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা করেছিল আমেরিকা। কিন্তু তারপর থেকে পাঁচটি দেশ (আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন) ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫০ টি পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা করে এসেছে। কিন্তু এরপরেই বিশ্বের বাকি সমস্ত দেশ আস্তে আস্তে সোচ্চার হয় এই পরীক্ষা গুলোকে বন্ধ করার বিরূদ্ধে। তার কারন, এই পরীক্ষাগুলোর ফলে অনেক সময়েই তেজস্ক্রিয় বিকিরণ পরিবেশে ছড়িয়ে পরার ভয় থাকে। ১৯৫৪ সালে ভারতবর্ষের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত নেহরুও এই অস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করার স্বপক্ষে জোরালো যুক্তি পেশ করেন।
অবশেষে অনেক প্রতিবাদ ও আলোচনার পরে একটা চুক্তি হয়। তাতে বলা হয় যারা এই চুক্তিতে সই করবে সেই সমস্ত দেশ খোলা জায়গায়, মহাকাশে এবং সমুদ্রের তলায় পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা করতে পারবে না। ১৯৬৩ সালের এই চুক্তিটি ‘পারশিয়াল টেষ্ট ব্যান ট্রিটী’ বা ‘পি টি বি টি’ নামে পরিচিতি পায়। মানে চাইলে কোন দেশ মাটির তলায় পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা করতে পারে। এই চুক্তিতে সই করে আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন। উল্লেখযোগ্য ভাবে ফ্রান্স এবং চীন এই চুক্তি তে সই করে না। পরবর্তী কালে অবশ্য এই চুক্তির ই একটি বর্ধিত রুপ দেওয়া হয়, ১৯৯৬ সালে। যেখানে কোনরকম পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা করাই নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রাখা হয়। চুক্তি টি কে বলা হয় ‘কম্প্রিহেনসিভ টেষ্ট ব্যান ট্রিটী’ বা ‘সি টি বি টি’ ।
লক্ষ্যনীয় যে, এই দুই চুক্তিতেই কোন দেশকে এমন বলা হয়নি যে তাদের পরমানু অস্ত্র সংক্রান্ত গবেষনা বন্ধ করে দিতে হবে। তারা শুধু পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা করতে পারবে না। কিন্তু শুধু পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করলেই পরমানু অস্ত্র প্রসার রোধ করা সম্ভব ছিল না। তাই পরমানু অস্ত্র প্রসার রোধ করতে ১৯৬৮ সালে আর একটি চুক্তি র কথা বলা হয়। এর নাম দেওয়া হয় ‘নিউক্লিয়ার নন প্রলিফারেশন ট্রিটী’ বা ‘এন এন পি টি’ বা আরও সংক্ষেপে ‘এন পি টি’। এই চুক্তির মূল বিষয় হল বিশ্বের পাঁচটি দেশ আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন কে পরমানু শক্তিধর দেশ বলে মেনে নেওয়া হবে। এই পাঁচটি দেশ এই চুক্তিতে সই না করা অন্য কোন দেশ কে পারমানবিক প্রযুক্তি বা জ্বালানি সরাবরাহ করবে না। যে সমস্ত দেশ এই চুক্তিতে সই করবে তাদের মেনে নিতে হবে, তারা কোনভাবেই পরমানু অস্ত্র সংক্রান্ত কোনও গবেষনা করবে না। পরিবর্তে তারা পারমানবিক প্রযুক্তি বা জ্বালানি পাবে শান্তিপূর্ন পারমানবিক শক্তি (পারমানবিক বিদ্যুৎ ) উৎপন্ন করার জন্যে। কিন্তু এই সমস্ত দেশ গুলোকে নিজেদের পারমানবিক চুল্লী গুলি ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সী’ বা ‘আই এ ই এ’ র তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। যাতে ‘আই এ ই এ’ র দল দরকার হলে পরীক্ষা করতে পারে এই পারমানবিক চুল্লী গুলি শুধুই পারমানবিক বিদ্যুৎ তৈরির কাজে ব্যবহার হচ্ছে, না পরমানু অস্ত্রের জন্যে ফিসাইল মেটেরিয়াল তৈরি করা হচ্ছে। প্রসঙ্গতঃ ‘আই এ ই এ’ রাষ্ট্রসংঘের ছত্রছায়ায় কাজ করে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল এই ‘এন পি টি’ চুক্তিতে কোথাও এই কথা বলা নেই যে সমস্ত পারমানবিক শক্তিধর দেশগুলিকে নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে তাদের সমস্ত পারমানবিক অস্ত্রসম্ভার নষ্ট করে ফেলতে হবে। তার অর্থ এই যে, পারমানবিক শক্তিধর দেশগুলো একদিকে তাদের অস্ত্রসম্ভার রেখে দেবে, আবার অন্যদিকে, অন্য কোনো দেশকে নতুন করে পারমানবিক অস্ত্র বানাতে দেবে না। (এই প্রসঙ্গে একটি দেশের নাম এখানে উল্লেখ করতেই হয়। দক্ষিন আফ্রিকা ই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা নিজেরা পারমানবিক অস্ত্র তৈরী করেও নিজেরাই তা নষ্ট করে ফেলেছে।) চুক্তির এই খামতির কথা ভারত সহ আরও কিছু দেশ বারবার বলে এসেছে। তাই ভারতের পক্ষে এই চুক্তি সই করা সম্ভব হয় নি। ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ভারত প্রথম পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা করে ১৯৭৪ সালে। পরে আবার দ্বিতীয় পরীক্ষা করে ১৯৯৮ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন। ভারতের দ্বিতীয় পরীক্ষার পরে পরেই পাকিস্তান তাদের পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা করে। এরপরে ২০০৬ সালে উত্তর কোরিয়াও সেরে ফেলে তাদের পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা। সেই অর্থে পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা না করলেও ধরে নেওয়া হয় ইস্রায়েলের কাছেও পরমানু অস্ত্র আছে। ফলে ‘এন পি টি’ তে স্বীকৃত পাঁচ পরমানু দেশ ছাড়াও এই মুহুর্তে ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া আর ইস্রায়েল এখন পরমানু শক্তি সম্পন্ন দেশ। এর মধ্যে ভারতই প্রথম ঘোষনা করে যে তারা পারমানবিক অস্ত্র দ্বারা আক্রান্ত না হলে কখনই পরমানু অস্ত্র ব্যবহার করবে না। এর মধ্যে উত্তর কোরিয়া একসময় ‘এন পি টি’ তে সই করেও পরে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে। পাকিস্তানি বিজ্ঞানী এ কিউ খান পরমানু প্রযুক্তি অন্য দেশে পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েন। আর ইস্রায়েল এখনও পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা না করায় অনেক বিশেষজ্ঞই নিশ্চিত নন তাদের সত্যিকারের ক্ষমতা কতদূর। এইরকম অবস্থায় আমেরিকা সহ ‘এন পি টি’ স্বীকৃত পাঁচ পরমানু শক্তিধর দেশ এখন ভারতকেই সবচেয়ে দায়িত্ববান পরমানু শক্তি সম্পন্ন দেশ বলে মনে করছে। তাই ভারত ‘এন পি টি’ তে সই না করলে প্রথমতঃ এই চুক্তির গুরুত্বই কমে যায়। আর দ্বিতীয়তঃ ভারতের পরমানু গবেষনার ওপরও কিছুটা নিয়ন্ত্রন রাখা যায়। ফলে ভারতকে যেনতেন প্রকারেণ ‘এন পি টি’ তে সই করাতে উঠে পড়ে লেগেছিল সমস্ত পারমানবিক শক্তিধর দেশ গুলি। কিন্তু ভারত পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দেয় এই চুক্তির দ্বিচারিতা না দূর করলে ভারতের পক্ষে এই চুক্তি সই করা সম্ভব নয়।
ভারতের আভ্যন্তরীন প্রেক্ষাপট বিচার করলে গত দশ বছরে ভারতের অর্থনীতি যেভাবে বেড়েছে তা ধরে রাখতে গেলে অন্যতম প্রয়োজনীয় হল 'বিদ্যুৎ'। ভারতে এখনও প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌছায়নি। ২০৩০ সাল অবধি বিদ্যুৎ ঘাটতির পরিমান হবে প্রায় দেড় লক্ষ মেগাওয়াট। ২০৫০ সাল অবধি এই ঘাটতির পরিমান বেড়ে দাড়াবে প্রায় চার লক্ষ মেগাওয়াট। কেমন করে আসবে বিদ্যুৎ, যখন তেল ভাঁড়ার প্রায় শূন্য। কয়লা যা আছে ২০৫০ সাল অবধি তা দিয়ে চালানো সম্ভব নয়। অন্যান্য নন কনভেনশনাল শক্তি দিয়েও চাহিদার র সামান্য ভগ্নাংশ ও মেটানো সম্ভব নয়। পারমানবিক বিদ্যুৎ ছাড়া আর কোনও উপায় ভারতের কাছে নেই। কিন্তু পারমানবিক বিদ্যুৎ ও আমাদের সমগ্র চাহিদার প্রায় ৩-৪ শতাংশ ই বর্তমানে মেটাতে পারছে। কারন পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সমস্ত পারমানবিক চু্ল্লী গুলো ইউরেনিয়ামের অভাবে ধুঁকছে। নতুন চু্ল্লী বানানোর কথা থাকলেও কি দিয়ে চলবে সেগুলো ? এই পরিপ্রেক্ষিতেই ভারত চিন্তা করতে শুরু করে ইউরেনিয়াম অন্য কোনো দেশ থেকে কিনে এনে আরও বেশী পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব কিনা।
এদিকে ভারতের প্রথম পরমানু অস্ত্র পরীক্ষার পরই তৈরী হয়েছে ‘নিউক্লিয়ার সাপ্লাই গ্রুপ’ বা ‘এন এস জি’। মূলতঃ ভারতের পরমানু অস্ত্র পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতেই তৈরী হয়েছিল এই সংস্থা। বলা হয়েছিল ভারত কে অন্য দেশ (কানাডা), যে পারমানবিক চুল্লী দিয়েছে শান্তিপূর্ন শক্তির প্রসারের জন্যে, ভারত তা ব্যবহার করেছে পারমানবিক অস্ত্র তৈরীর কাজে। এই রকম ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে, তা আটকানোর জন্যেই তৈরী হয় এই ‘এন এস জি’। যে সমস্ত দেশ, ইউরেনিয়াম অন্য কোনো দেশ কে বিক্রী করতে চায়, তাদের নিয়ে তৈরী করা হয় এই গ্রুপ। যে সমস্ত দেশ, ‘এন এস জি’ র সদস্য কোনো দেশ থেকে ইউরেনিয়াম কিনতে চায়, সেই সমস্ত দেশ কে তাদের পারমানবিক চুল্লী ‘আই এ ই এ’ র তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে।
তার মানে সোজা সরল ভাষায়:
১) এই মুহুর্তে ভারত যে অবস্থায় রয়েছে তাতে নিজেদের পারমানবিক গবেষণার জন্যেই ভারতের দরকার প্রচুর পরিমান ইউরেনিয়াম। বোঝাই যাচ্ছে যে সেক্ষেত্রে পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তা কতটা প্রয়োজনীয়।
২) ভারত কে ইউরেনিয়াম যদি কিনতেই হয় তবে সেটা অবশ্যই কিনতে হবে ‘এন এস জি’ র সদস্য এমন কোনও দেশ থেকে ।
৩) কিন্তু তাতে মুশকিল হল যে, ‘এন এস জি’ র সদস্য এমন দেশ থেকে ইউরেনিয়াম কিনতে হলে ভারতকেও সমস্ত পারমানবিক চুল্লী ‘আই এ ই এ’ র কাছে খুলে দিতে হবে। যা ভারত করতে দিতে পারে না, কারন প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানের কাছে পরমানু অস্ত্র থাকার দরুন ভারতের কাছেও পারমানবিক অস্ত্র বানানোর জন্যে পর্যাপ্ত ফিসাইল মেটেরিয়াল থাকা আবশ্যিক, যা ‘আই এ ই এ’ কখনওই ভারতকে করতে দেবে না।
ঠিক এই সময়েই আসে আমেরিকা র সাথে একটা অন্য রকম চুক্তির সুযোগ। কেমন হয় যদি এমন একটা চুক্তি হয় যাতে ভারত আমেরিকা থেকে পাবে ইউরেনিয়াম বা অন্যান্য পারমানবিক সরঞ্জাম (ডুয়াল ইউস টেকনোলজি)। কিন্তু অধিকার থাকবে নিজস্ব ফিসাইল মেটেরিয়াল বানানোর। এই রকম একটি চুক্তিই এখন বর্তমান রাজনীতির মূল বিষয়বস্তু। চুক্তিটির নাম হল ইন্দো আমেরিকা ১২৩ চুক্তি। এতে বলা হল, ভারত তার ইচ্ছেমতো পারমানবিক চুল্লী গুলোকে সিভিলিয়ান এবং মিলিটারি, এই হিসেবে আলাদা করে দিক। সিভিলিয়ান পারমানবিক চুল্লী গুলোর জন্য ইউরেনিয়াম সরাবরাহ করবে আমেরিকা। সেই চুল্লীগুলো অব্শ্যই থাকবে ‘আই এ ই এ’ র তত্ত্বাবধানে। কিন্তু মিলিটারি পারমানবিক চুল্লীতে ভারত তার ইচ্ছেমতো ফিসাইল মেটেরিয়াল তৈরি করতে পারবে। বলাই বাহুল্য, মিলিটারি পারমানবিক চুল্লীর জন্য ইউরেনিয়াম ভারতকেই জোগাড় করতে হবে।
তাহলে ব্যাপারটা দাড়াল এই রকম যে ‘এন পি টি’ তে বা ‘সি টি বি টি’ তে সই না করেই ভারত পরমানু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইউরেনিয়াম পেতে পারে এই চুক্তির মাধ্যমে।
কিন্তু তাহলে কেন চুক্তির এত বিরোধীতা ?
তার একটা কারন হল, ভারতের সাথে এই চুক্তি করার আগে আমেরিকা তাদের দেশে একটা আইন বানিয়েছে, এই চুক্তিকে গ্রহনযোগ্য করে তোলার জন্য। প্রনয়ন কর্তা হেনরি হাইডের নাম অনুসারে এই আইনের নাম ‘হাইড অ্যাক্ট’। এই আইনের মূল বক্তব্য ভারত যদি পরমানু পরীক্ষা করে, তাহলে আমেরিকা ভারতকে আর কোনো পরমানু প্রযুক্তি বা জ্বালানি সরাবরাহ করবে না। এছাড়াও আছে আরও কিছু শর্ত, যেমন,পারমানবিক চুল্লী তে ব্যবহৃত জ্বালানি ভারত যথেচ্ছ ভাবে রি-প্রসেস করতে পারবে না। প্রসঙ্গতঃ ব্যবহৃত জ্বালানি থেকে রি-প্রসেস করে ফিসাইল মেটেরিয়াল (পরমানু অস্ত্রের জন্য ব্যবহারের উপযোগী) বের করে নেওয়া যায়।
কিন্তু তাহলে তো ভারতের প্রধান শর্ত ই পালিত হচ্ছে না। ওদের এই আইন অনুযায়ী ভারত পরমানু পরীক্ষা করার অধিকার হারাচ্ছে। তাহলে ‘এন পি টি’ তে বা ‘সি টি বি টি’ র সাথে কি তফাৎ রইল এই চুক্তির ?
আপাত দৃষ্টিতে এরকম মনে হলেও ব্যাপারটা কিন্তু আদৌ এরকম নয়। কারন, ভারত ‘হাইড অ্যাক্ট’ মানতে বাধ্য নয়। ‘হাইড অ্যাক্ট’ একটি আমেরিকান আইন, যা মেনে চলার দায়িত্ব শুধু আমেরিকান সরকারের। ভারত শুধু ১২৩ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি মেনে চলার জন্য দায়বদ্ধ। যে কোনও সময় যে কোনও এক পক্ষ এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
কিন্তু প্রশ্ন হল আমেরিকা যদি সত্যিই জ্বালানি দেওয়া বন্ধ (সেটা যে কোনও কারণেই করতে পারে আমেরিকা) করে দেয়, তাহলে কি করবে ভারত?
তার জন্য অন্য রাস্তাও আছে। এই চুক্তি বাস্তবে রূপায়িত হওয়ার আগে ভারতকে ‘আই এ ই এ’ র সাথে চুক্তি করতে হবে এবং তারপরে ‘এন এস জি’ র অনুমোদন নিতে হবে। এক্ষেত্রে এটা বলে নেওয়া বিশেষ প্রয়োজন মনে করছি যে আমেরিকার সাথে এই ‘ইন্দো আমেরিকা ১২৩’ চুক্তি সম্পন্ন হলে ভারতকে ‘এন এস জি’ র অনুমোদন নেবার সময় শুধু মাত্র সেই সব পারমানবিক চুল্লী গুলোকেই ‘আই এ ই এ’ র কাছে খুলে দিতে হবে, যেই চুল্লী গুলো কে তারা ‘সিভিলিয়ন’ ঘোষনা করবে। যেটা ‘আই এ ই এ’ র সাথে চুক্তির সময়ই ঠিক করে নিতে পারে ভারত।
‘আই এ ই এ’ র সাথে চুক্তির সময় ভারত এমন শর্ত রাখতে পারে যাতে করে হঠাৎ করে অন্য দেশ জ্বালানি বন্ধ না করে দিতে পারে। অথবা এমন শর্ত রাখা যেতে পারে যে ভারত তার ইচ্ছে মতো জ্বালানি ভান্ডার তৈরি করে নিতে পারে, আগে থেকেই এমন বিপদের আশংকা করে, যাতে করে হঠাৎ জ্বালানি বন্ধ হয়ে গেলেও ভারতকে সমস্যায় পরতে না হয়। তাছাড়া একবার ‘এন এস জি’ র থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়ে গেলে অন্য কোনও দেশের কাছ থেকেও জ্বালানি বা প্রযুক্তি নেওয়ার ব্যাপারে কোনো বাধা থাকছে না। ফ্রান্স ও রাশিয়া ইতিমধ্যেই আগ্রহ দেখিয়েছে ভারতের সাথে চুক্তি করার ব্যাপারে। সুতরাং ১২৩ চুক্তির মতই জরুরি বিষয় ‘আই এ ই এ’ র সাথে ভারত কি শর্তে চুক্তি করছে সেইটা। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই ‘আই এ ই এ’ র সাথে চুক্তির খসড়া প্রকাশ করেছে। তাতে উপরোক্ত শর্ত গুলিও আলোচনায় থাকছে। এই প্রসঙ্গে বলা ভাল, এই সব জটিল প্রশ্ন তখনই আসবে যখন ভারত পরমানু পরীক্ষা করতে চাইবে। বিশেষজ্ঞদের মতে অদূর ভবিষ্যতে সেই সম্ভাবনা খুবই কম। এই মুহুর্তে স্বীকৃত পরমানু শক্তিধর দেশ গুলিও পরমানু পরীক্ষা একরকম বন্ধই রেখেছে, যদিও পরমানু অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় ফিসাইল মেটেরিয়াল হয়ত বানিয়েই চলেছে। ভারতের মত দায়িত্ববান পরমানু শক্তিধর দেশও সেই পথেই হাঁটবে কিনা সে তো সময়ই বলবে।
পরিশেষে একনজরে দেখা যাক, এই চুক্তির ফলে ভারত কি কি পেতে চলেছে।
১) ভারত পেতে চলেছে, পরমানু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পরমানু জ্বালানি ও প্রযুক্তি। ‘এন পি টি’ তে বা ‘সি টি বি টি’ তে সই না করেই।
২) ভারতের অধিকার থাকছে পরমানু অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় ফিসাইল মেটেরিয়াল বানানোর।
৩) ভারত আরও যা পাচ্ছে তা হল বকলমে পরমানু শক্তিধর দেশের স্বীকৃতি। ভারতকে গোটা বিশ্ব যে দায়িত্ববান পরমানু শক্তিধর দেশ বলে মনে করে তার প্রমান হল, শুধু ভারতের জন্যই এমন এক চুক্তি করা যা পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া বা ইস্রায়েলের মত পরমানু শক্তি সম্পন্ন দেশের পক্ষেও ঈর্ষনীয়।
৪) ভারত পরমানু পরীক্ষার অধিকারও হারাচ্ছে না। আস্থা ভোটের জবাবী ভাষনে প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংহের কিছু উদ্ধৃতি এই ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। উনি বলেছেন,
“I confirm that there is nothing in these agreements which prevents us from further nuclear tests if warranted by our national security concerns. All that we are committed to is a voluntary moratorium on further testing. Thus the nuclear agreements will not in any way affect our strategic autonomy. The cooperation that the international community is now willing to extend to us for trade in nuclear materials, technologies and equipment for civilian use will be available to us without signing the NPT or the CTBT.”
লেখার শেষে কিছু স্বীকারোক্তি। আমি পরমানু বিশেষজ্ঞ নই, জানার তাগিদে ইন্টারনেট ঘেঁটে লেখার চেষ্টা করেছি। আমার husband (তিনি একজন নিউক্লিয়র সাইন্টিস্ট)র সাথে এই ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা পরমানু চুক্তি বিষয়ে আমার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে। তা সত্বেও এই লেখায় অনিচ্ছাকৃত কিছু ভুল থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
ছবি সৌজন্য : ইন্টারনেট
২৪শে জুলাই
প্যারিস, ফ্রান্স।
Friday, May 2, 2008
My Roman Holiday:
Amader jakhan Italy jaoar plan hoyechhilo, takhan Venice, Pisa, Florence sab jaygar janye du din kore samay rekhechhilam, shudhu Rome er janye somoy rakha hoechhilo pray 2 and half days… mone hoyechhilo besh besi somoy dichhi ekta chhoto shahar dekhar janye…. jodio amader je bandhu Pisa-y thake, (amader Italy r host) se bolechhilo bhalo kore Rome dekhte hole tin din er besi lagbe… thik korechhilam Venice, Pisa ar Florence dekhe sheshe jabo Rome e…kintu jakhan Italy theke phire elam, takhon moner madhye resh phele gelo shudhu Rome…..mone hochhilo itihas chokher samne uthe esechhilo oi duto din…tai thik korlam..Venice noy, Pisa noy, Florence noy, likhte hole Rome niyei likhbo…
Rome ke Italian ra Roma bole (amar meyer bhashay Italian bola besh soja… sheshe ekta a athoba o bosiye nite hobe sudhu….kathata thik noy jodio)…amader hotel ta Rome er main station Rome Termini r kachhei chhilo… Pisa theke Rome pouchhe, hotel e dhukte dhukte-i pray bikel char ta….kichhukhan rest niye beriye porlam shahar dekhte...Rome shahar ta besi boro noy…heNtei ekta map niye beriye porlam…prathomei straight Colosseum… chhotobela-y pora sei sob boi er smriti, ar ta chhara recently Russell Crowe er Gladiator dekhe Colosseum er prati akta extra akorson chhilo mone mone….eta bodh hoy Rome er sab cheye popular spot… eta ekta amphitheatre jekhane mostly gladiatorial contests hoto ancient Rome e…er samporke motamuti sabai jane tai ar besi kichhu bolchhi na…..
Rome ke Italian ra Roma bole (amar meyer bhashay Italian bola besh soja… sheshe ekta a athoba o bosiye nite hobe sudhu….kathata thik noy jodio)…amader hotel ta Rome er main station Rome Termini r kachhei chhilo… Pisa theke Rome pouchhe, hotel e dhukte dhukte-i pray bikel char ta….kichhukhan rest niye beriye porlam shahar dekhte...Rome shahar ta besi boro noy…heNtei ekta map niye beriye porlam…prathomei straight Colosseum… chhotobela-y pora sei sob boi er smriti, ar ta chhara recently Russell Crowe er Gladiator dekhe Colosseum er prati akta extra akorson chhilo mone mone….eta bodh hoy Rome er sab cheye popular spot… eta ekta amphitheatre jekhane mostly gladiatorial contests hoto ancient Rome e…er samporke motamuti sabai jane tai ar besi kichhu bolchhi na…..
Colosseum er pasei achhe Roman Forum er dhongsabosesh…..mone kora hoy ei Roman Forum jayga ta ghire-i gore uthechhilo purono roman empire…ekhane prachur ancient Rome er ruins dekha jabe…tar modhye bola jete pare,….
1)Temple of Saturn (pore jeta roman empire er treasury hoechhilo….samasta gold, silver ba anek precious jinis ekhane rakha hoto),
2)Temple of Castor and Pollux (third Roman empire Caligula r prasad o naki ekhanei chhilo),
3)Temple of Caesar (mone kora hoy, Julius Caesar ke ekhanei cremate kora hoechhilo),
4) Forum of Caesar…ei puro elaka ta ghurte ghurte chokher samne Julius Caesar ba Romulus, athoba asonkhyo movie te dekha roman empire chokher samne uthe aste badhyo...
Roman Forum er thik pechhone palantin hill ….…bikhyato seven hills of Rome er centermost hill…eikhanei pratham Romulus Rome city r foundation tairi koren… sei dik diye bolte gele bikhyato Roman empire er sabcheye ancient site ei palantin hill….
Roman Forum diye cholte choltei pouchhe jaoa jabe Piazza Venzia- y…Italy te Piazza mane hochhe square ba pati banglay chou rastar mor… ei square e gele prathomei chokhe porbe National Monument of Victor Emmanuel II ...Khub sundor dekhte puro white marble er tairi ei monument ta tairi kora hoechhilo unified Italy r pratham raja Victor Emanuele er smriti te…ei monument e ekta eternal flame sab somoy jwalano thake (amader amar jwan jyoti r moto) in memory of an unknown soldier …..pratham din er Rome tour ekhanei samapto…karan besh rat hoechhe…..sutorang back to Hotel (via Mcdonald)…
Porer din Termini station theke bus e kore soja Vatican City….motamuti 30 minutes er rasta…bus theke 2 minutes haNtlei, Piazza San Pietro ba Saint Peter's Square…samne jetei dekhlam sei bishwo bikhyato St. Peters Basilica, jeta etodin TV te dekhe esechhilam, jekhane natun Pope elected hoye ese hat naren…sambhoboto sabcheye rich ar holy catholic church….bishwabikhyato Italian sculptor Bernini ei basilica redesign korechhilen 1656 sale…basilica r samner dik ta architecturally sundor pillars diye elliptically ghera… ellipse er centre e pray 40 meter lamba red granite er tairi ekta pillar…ei obelisk ta Egypt theke Rome e niye esechhilen Roman emperor Caligula....
Lamba line ar security checking er pore abosheshe bhetore prabesh karar chance pelam… ei basilica te dhokar samay short skirt cholbe na…matha theke pa obdhi bastro poridhan aboshyok…Summer e abar memsaheb ra matha theke pa abdhi dhaka r katha chintai korte paren na…amader kono asubidha na holeo, bahu memsaheb der ke dekhlam security atke dilo…dress code na match koray….
Basilica r bhetor ta ek kathay asadharon....bahu bikhyato sculptor der diye tairi kora sundor sab murty ar king size paintings…dhukei, prathome dan dike chokhe porbe Michelangelo r tairi kora 'Pieta'…. Michelangelo r anyotomo sristi ei 'Pieta'….. (sab cheye famous 'David' ke agei Florence e dekhe esechhi ….white marble e tairi ei murty te Jesus (after crucification) ma Mary r kole shue achhen…..er por eker por ek bibhinno Pope der smritite monument…bishesh bhabe chokhe porbe Bernini r tairi Pope Alexander VII...red and white marble diye tairi ei monument ta…ekebare sheshe Bernini r tairi 'Cathedra Petri (Latin)' ba 'Chair of Saint Peter'..gilt bronze diye tairi kora …basilica r bhetorer interior gulo o asadharon …bojha jay keno ei basilica ke sabcheye rich basilica bola hoy...
Church theke beriye ese chokhe porbei colourful uniform e Vatican security guards (swiss guard)…uniform gulo satyi adbhut dekhte…erpor 15 minutes heNte Vatican Museum…abar lamba line…abosheshe bhetore dhoka...je kono boro museum bhalo bhabe ghora r janye, half a day jothesto noy…tar opore sange bachcha kachha thakle…Vatican museum e anek gulo section ache…jemon
1) Gallery of Tapestries (wool and silk diye kaj kora suchi shilpo, silver and silver gilt thread o use kora hoechhe),
2) Gallery of Maps (whole Italy r map char diker wall ar ceiling e),
3) Raphael's rooms (famous painter Raphael er paintings),
4) Egyptian museum……..kintu sab cheye famous hochhe,
5) Sistine Chapel…...ekhane sudhu tar kathai alpo ektu boli…...sab gulo gallery ghure ghure pa byatha hoe gele sab seshe asbe ei sistine chapel…sistine chapel er internal dimension ta holo pray 40 meter lamba, width pray 13 meter ar height 20 meter…old testament er Solomon temple er dhaNche banano…..samasto wall ar ceiling e life size paintings, bikhyato samasto painter ar sculptor der.. Michelangelo, Raphael saho samasto renaissance artist der…sabcheye massive paintings ta holo Michelangelo r 'the last judgement'...puro ekta wall jure bisal ei paintings ta sesh hote samay niyechhilo pray 6 years…1535 sale suru hoechhilo ei painting ta…basically Jesus er second coming ke depict kora hoechhe…mone kora hoy, Michelangelo nijero ekta self portrait ekechhilen ei paintings tar bhetore…ceiling eo purotai Michelangelo r painting…sab guloi bible er bibhinno ghotona niye…sab cheye popular painting 'creation of adam'…jekhane God adam er jibon dan korchhen tar ekta finger theke…anek bar dekha ei chhobita chokher samne dekhe ami abhibhuto…kintu ceiling ta anek unchute bole, khub bhalo kore dekha jayna…zoom lens thakle close up photograph nilei borong bhalo dekha jay…e chharao achhe 'downfall of adam and eve'…jekhane adam and eve ke Eden garden theke ber kore deoa hochhe…erokom asonkhyo tukro tukro ghotona niye ei samasta painting…Sistine Chapel dekha r abhigyota ta mone thakbe chirokal...
Parer din eke eke dekhlam….
1) Piazza del Popolo : amar mote sabcheye sundor square, jekhane age public execution hoto,…ar er pash diye ekta rasta chole gechhe Villa Borghese er dike, jekhan theke puro Rome er view ta paoa jay,
2) Piazza de spagna spanish steps : Poet Keats ekhanei kachakachhi kothao thakten sunlam… anek gulo steps uthe gechhe Trinità dei Monti bole ekta church e,
3) Fontana di Trevi ba Trevi Fountain : 'Roman Holiday' movie ta jara dekhechho, tara chinte parbe… sabcheye sundor fountain…coin toss kora ta ekhane ekta tradition…. bola hoy ekbar coin toss korle Rome e abar phire asa jay…. dwitiyo bar korle taratari biye hoy….ar third bar coin toss korle khub taratari divorce hoy...amar bor tinbar toss kore esechhe…jani na or bhagyo phirbe ki na,
4) The Pantheon ....commissioned by Emperor Hadrian....is a tribute to Roman Gods,
5) Piramid : Gaius Cestius Epulo bole ekjon Roman er tomb ache... ei piramid ta tairi hoyechhilo christ er janmabar 10 bachhar age… ei piramid er bhetore dhoka jay na…. eke ghire rekhechhe ekta sundor grave yard,
6) Circus Maximus : Palatine hill er pechhone ekta boro math… age kar dine ekhane chariot race hoto… jara 'Ben Hur' movie ta dekhechho, tara identify korte parbe chariot race er sathe…ekhon ekhane boro get together hoy……World cup final er samay ei mathe boro parda lagiye football match telecast kora hoyechhilo…ar Italy jite jaoar por se uddamota naki dekhar moto chhilo…....
Byas ei holo amader Rome tour....samay shesh hoye elo…er modhye amader dekha holo na Michaelangelo r akta creation 'Moses'…. jeta 'San Pietro in Vincoli' bole ekta choto church e rakha achhe… Michaelangelo r nijer annotomo favourite ei sculpture ta…phire elam Julius Ceasar, Caligula, eder swapno dekhte dekhte…abosyoi termini stationer kachhe bangladeshi dokane pet pure machh, bhat, kosa mangso kheye.
Nicher duto video te Rome ebang Vatican City-r alpo kichhu angsho tule dhorar chesta korlam.
Rome:
Vatican City :
Thursday, April 24, 2008
সুখপুরী
সুখপুরীটি কোথায় আছে ?
কোথায় তাহার বাস ?
ইচ্ছে হয়ে আছে মনে,
সে যে মনের দাস।
সুখের খোঁজে বেরিয়ো না গো,
গোটা বিশ্ব জুড়ে
মনের মাঝে ডুব দিয়ে,
খোঁজো তাকেই বারে বারে।
ছোটোবেলার রঙ্গীন স্বপ্ন,
যা রাঙাতো রঙে তোমায় !
শেষ কবে দেখেছ তারে ?
থাকে সে এখন কোথায় ?
কাজের ভীরে পরেছে চাপা,
“মন” করেছ অন্ধকার !
স্বপ্ন দেখতে শেখো আবার
চোখে ভরে দাও রঙ বাহার।
ইচ্ছে ডানা না ছেঁটে,
“স্বপ্ন” তে দাও ভরে !
বয়স যতই বারে বারুক,
“মন” রেখো সবুজ করে।
স্বপ্ন দেখতে ভুলো না যেন,
কোর না বন্দী খাঁচায় !
নইলে কি আর তফাৎ বল,
মরে যাওয়া কিংবা বেঁচে থাকায় ?
Saturday, April 19, 2008
I can simply say they were paid back in their own coin: Buddhadeb Bhattacharya
Prosango Nandigram........gatobachhor bhishan bhabe akta baro soro jhakuni kheyechhilam.......nara diyechhilo Pashchimbanger ei chhotto gram ti……bicholito korechhilo mon ke…….anek prashno, anek bhabna, anek jiggasa jege uthechhilo nijer bhabnay……ghatona rajnaitik chhilo ta niye kono sandeho nei….rajnaitik aman anek ghatonai amader moto sadharan manus ke abak kore dey…kintu prashno holo , tahole Nandigram e aman ki ghotechhilo ja rajneeti te jara pratyakkho bhabe jukto noy tarao rastay beriye porlo??......keno rajneetir uthon theke baire beriye elo ?? …..
Nandigrame ja ghotechhilo :…..sekhane akta Muktanchal gore uthechhilo, nijeder jomi, bhite- mati surakkhar tagide…….jodio ei Muktanchal ke support kora jay na kono bhabei…akta sustho somaje ei rakom kono Muktanchal thakte pare na…..kintu sei Muktanchal e noirajyer abokash ghotanor ja byabostha sei rajyer shashok dol korechhilen ta ak kathay abhutopurbo borborota…atyanto lajja jonok…..Britis raj er katha mone koriye dey…..sei rajyer shashok dol tar prashashonik khomotar opobyabohar korechhilen sedin……nijer cadar bahini ke police uniform poriye, hate banduk dhoriye , sangbadpatrer swadhinota ke bisarjan diye, ak bishesh kayday gramti ke chaturdik theke ghire, anek rakto ganga boiye sekhane shesh porjonto shashan byabostha kayem korechhilen….shashan byabostha phiriye anar ei pantha ke ki sadhubad deoa uchit ??......ei ghotona ki mone poriye dey na 70 er Siddhartha Shankar Ray er amoler Nakshal andolan domone police bahinir borborata ke ??..... sedin Siddhartha babu tar police leliye diyechhilen ar aj Buddho babu o tai korlen……tafat kothay thaklo??.......dutoi state sponsored terrorism......sedin jodi sadharan manus sei ghotona ke somorthan na kore tobe aj keno ??.......sedin sadharan manus Siddharta Shankar ray er sarkar ke phele dite dwidha kore ni..... tabe aj ei dwidha keno ??......Pashimbange birodhi pakkhe jogyo netar abhab achhe bole jara pash katiye jan tader prati amar prashno …….sedin sadharan manus Jyoti babuke bhishan jogyo neta mone korechhilen naki onake akta bikalpo hisebe joyee korechhilen ??......amra jani, je aj jara shashak doler asone bose achhen tarai sedin bandh deke, bus, trum puriye ak asthir rajnaitik poribesh srishti korechhilen……..tabuo manus tader kei akta bikalpo hisebe beNchhe niyechhilen…..tahole aj noy keno ??........sediner Nakshal andolan anek boro maper chhilo…..sara rajyo jure cholchhilo nakshal nidhan…..ar ajker Nandigram akti chhoto gram er ghotona…..sekhaneo aki bhabe manus nidhan holo...….tabe ki chhotto akti gram er ghotona bole par peye jaben enara ??.......naki etao shashok doler parikolpona maphik ghotano akti ghotona......sab gram basi ke janiye deoa.......dekho bhai gramer lokjon....andolan korona.....korle Nandigram e amader bijay ullas er chhobi khana akbar mone koro......
30 bachhor aktana khomotay thakar itihas ar kono rajnaitik doler nei….ar ei 30 bachhorer rajotye akhan hoyto keu ar bhater phyan cheye bhikkhe kore na kintu bhikhiri(bekar) sankhya ta ki adou komechhe ??.....eto gulo bachhorer suphal( ???) er day jodi ei sarkar er hoy tahole kuphaler day o to enader mathatei bortano uchit…….sudhu mediar antipublicity r dohai dite anekei bhalobasen….kintu amar aktu anyo rakom mone hoy…..amar mone hoy 30 bachhorer rajotye anek anyay er shikor gere bosechhe…..swajon poshon ar party affiliation jogyotar thekeo boro mapkathi hoye daNriyechhe, shikkha, swastho, prashashan, panchayet sakol khetre……..er karan aktai…aktana khomota bhog….tai amar mone hoy kichhuta ajogyo holeo ei shikor upranor jonyo paribartan akta darkar……..darkar akta sushtho rajnaitik paribesh…..
Nandigrame ja ghotechhilo :…..sekhane akta Muktanchal gore uthechhilo, nijeder jomi, bhite- mati surakkhar tagide…….jodio ei Muktanchal ke support kora jay na kono bhabei…akta sustho somaje ei rakom kono Muktanchal thakte pare na…..kintu sei Muktanchal e noirajyer abokash ghotanor ja byabostha sei rajyer shashok dol korechhilen ta ak kathay abhutopurbo borborota…atyanto lajja jonok…..Britis raj er katha mone koriye dey…..sei rajyer shashok dol tar prashashonik khomotar opobyabohar korechhilen sedin……nijer cadar bahini ke police uniform poriye, hate banduk dhoriye , sangbadpatrer swadhinota ke bisarjan diye, ak bishesh kayday gramti ke chaturdik theke ghire, anek rakto ganga boiye sekhane shesh porjonto shashan byabostha kayem korechhilen….shashan byabostha phiriye anar ei pantha ke ki sadhubad deoa uchit ??......ei ghotona ki mone poriye dey na 70 er Siddhartha Shankar Ray er amoler Nakshal andolan domone police bahinir borborata ke ??..... sedin Siddhartha babu tar police leliye diyechhilen ar aj Buddho babu o tai korlen……tafat kothay thaklo??.......dutoi state sponsored terrorism......sedin jodi sadharan manus sei ghotona ke somorthan na kore tobe aj keno ??.......sedin sadharan manus Siddharta Shankar ray er sarkar ke phele dite dwidha kore ni..... tabe aj ei dwidha keno ??......Pashimbange birodhi pakkhe jogyo netar abhab achhe bole jara pash katiye jan tader prati amar prashno …….sedin sadharan manus Jyoti babuke bhishan jogyo neta mone korechhilen naki onake akta bikalpo hisebe joyee korechhilen ??......amra jani, je aj jara shashak doler asone bose achhen tarai sedin bandh deke, bus, trum puriye ak asthir rajnaitik poribesh srishti korechhilen……..tabuo manus tader kei akta bikalpo hisebe beNchhe niyechhilen…..tahole aj noy keno ??........sediner Nakshal andolan anek boro maper chhilo…..sara rajyo jure cholchhilo nakshal nidhan…..ar ajker Nandigram akti chhoto gram er ghotona…..sekhaneo aki bhabe manus nidhan holo...….tabe ki chhotto akti gram er ghotona bole par peye jaben enara ??.......naki etao shashok doler parikolpona maphik ghotano akti ghotona......sab gram basi ke janiye deoa.......dekho bhai gramer lokjon....andolan korona.....korle Nandigram e amader bijay ullas er chhobi khana akbar mone koro......
30 bachhor aktana khomotay thakar itihas ar kono rajnaitik doler nei….ar ei 30 bachhorer rajotye akhan hoyto keu ar bhater phyan cheye bhikkhe kore na kintu bhikhiri(bekar) sankhya ta ki adou komechhe ??.....eto gulo bachhorer suphal( ???) er day jodi ei sarkar er hoy tahole kuphaler day o to enader mathatei bortano uchit…….sudhu mediar antipublicity r dohai dite anekei bhalobasen….kintu amar aktu anyo rakom mone hoy…..amar mone hoy 30 bachhorer rajotye anek anyay er shikor gere bosechhe…..swajon poshon ar party affiliation jogyotar thekeo boro mapkathi hoye daNriyechhe, shikkha, swastho, prashashan, panchayet sakol khetre……..er karan aktai…aktana khomota bhog….tai amar mone hoy kichhuta ajogyo holeo ei shikor upranor jonyo paribartan akta darkar……..darkar akta sushtho rajnaitik paribesh…..
Friday, April 18, 2008
তোমার জন্যে
তোমার জন্যে গালিচা পেতেছিলুম,
লাল হলুদ কৃষ্ণচূড়ায় ভরে!
কোথা থেকে এক দমকা হাওয়া এসে,
সাজানো বাগান দিলে ছারখার করে!
গোলাপ দিয়ে বাগান সাজিয়েছিলুম,
মনের গভীরে সকল সত্বা জুড়ে,
না বর্ণ দেখেছ, না গন্ধ,
পরেছে শুধু কাঁটাই নজরে !
ভেবেছিলুম অঝোর ধারায় ঝরে,
ভাঙব তোমার নিরবতা আজ!
বাধ সাধল ঐ যে ঝোড়ো হাওয়া,
শোষন করে আমার যত ঝাঁঝ!
অনেক আশায় বুক বেধেঁছি যখন,
দূরে কোথাও সরিয়ে রেখে তোমায়,
ঠিক তখন-ই এলে হে প্রিয় সখা,
তোমার স্পর্শে ভেজাবে বলে আমায়!
আমি তখন সাত রাঙা এক পাখি,
উড়ছি এক অজানা সুখের দেশে!
মনের সকল দ্বিধা দ্বন্দ ঝেড়ে,
আজ আমি যে ভিজবো নিশ্বেষে!
আমি তখন ভাসছি যেন হাওয়ায়,
সুখ সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে মন!
ভাঙতে ভাঙতে কোন সে আলোর পথে,
এ যে আমার নিঃশর্ত সমর্পন!
Subscribe to:
Posts (Atom)